ওমরাহ পালনে প্রধানত চারটি কাজ জানা সকলের জন্য জরুরী । এই বিষয়ে অনেকের ই জানা না থাকায় দেখা যায় আমলের ভিতরে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়ে থাকে ।
ইহরাম পরিধান করা.
পবিত্র কাবাগৃহ তাওয়াফ করা.
সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সাঈ করা.
মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছোট করা.
এক:- “ইহরাম পরিধান করা”
ইহরাম পরিধানের আগে বেশ কিছু করণীয় আছে. এগুলো হলো—ইহরাম পরিধানের আগে সব ধরনের শারীরিক পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে হবে. যেমন- হাত-পায়ের নখ কাটা, গোঁফ, চুল ও নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা ইত্যাদি. ইহরাম পরিধানের আগে গোসল করা সুন্নত. এরপর পুরুষদের সেলাইবিহীন পোশাক ও নারীদের যেকোনো উপযুক্ত পোশাক পরিধানের মাধ্যমে ইহরাম পরিধান করতে হবে. মিকাত (ইহরামের জন্য নির্দিষ্ট স্থান) বা তার আগে ওমরাহর নিয়ত করতে হবে. এরপর তালবিয়া পড়তে হবে। কেউ যদি ইহরাম করতে চায়, সে ফরজ গোসলের মতো গোসল করবে. তারপর মাথা বা দাঁড়িতে সুগন্ধি লাগাবে. গোসল ও সুগন্ধি ব্যবহারের পর ইহরামের কাপড় পরিধান করবে. এরপর ফরজ নামাজের ওয়াক্ত হলে ফরজ নামাজ আদায় করবে. ফরজ নামাজের ওয়াক্ত না হলে অজুর সুন্নত হিসেবে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে. নামাজের পর কিবলামুখী হয়ে ইহরাম পরিধান করবে. ইচ্ছা করলে বাহনে (গাড়িতে) উঠে যাত্রার প্রাক্কালে ইহরাম করতে পারেন. তবে মিকাত থেকে মক্কার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার আগে ইহরাম করতে হবে. ইহরামের নিয়তে এই দোয়া পড়া যায়। উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল উমরাতা ফা-ইয়াসসিরহা লি ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নি.
ইহরাম পরিধানের পর কিছু কাজ নিষিদ্ধ. যেমন—সেলাইযুক্ত কাপড় বা জুতা ব্যবহার নিষিদ্ধ. অনুরূপ মস্তক ও মুখমণ্ডল ঢাকা. চুল কাটা বা ছিঁড়ে ফেলা. নখকাটা. ঘ্রাণযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো. স্ত্রীর সঙ্গে সংগম করা. যৌন উত্তেজনামূলক কোনো আচরণ বা কোনো কথা বলা। শিকার করা. ঝগড়া-বিবাদ বা যুদ্ধ করা. চুল-দাড়িতে চিরুনি বা আঙুল চালনা করা, যাতে ছিঁড়ার আশঙ্কা থাকে। শরীরে সাবান লাগানো. উকুন, ছারপোকা, মশা ও মাছিসহ কোনো জীবজন্তু হত্যা করা বা মারা. যেকোনো ধরনের গুনাহের কাজ করা.
দুই:- “কাবাঘরের তাওয়াফ করা”
পবিত্র কাবাগৃহ সাতবার প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফ বলা হয়. ওমরাহর উদ্দেশ্যে মসজিদে হারামে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করে এ
দোয়া পড়া—উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ. আউজু বিল্লাহিল আজিম ওয়া বি-ওয়াজহিহিল কারিম, ওয়া সুলতানিহিল কাদিম; মিনাশ শায়তানির রাজিম. আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা।’
এরপর তাওয়াফ শুরু করার জন্য হাজরে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যাবে. ডান হাত দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করবে ও চুমু খাবে. যদি হাজরে আসওয়াদে চুমু খেতে না পারে, হাত দিয়ে স্পর্শ করবে ও হাতে চুমু খাবে. যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করতে না পারে তাহলে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করে হাত দিয়ে ইশারা করবে এবং তাকবির বলবে. কিন্তু হাতে চুমু খাবে না. এরপর ডানদিক ধরে চলতে থাকবে। বায়তুল্লাহকে বামদিকে রাখবে। যখন রুকনে ইয়ামেনিতে (হাজরে আসওয়াদের পর তৃতীয় কর্নার) পৌঁছবে তখন সে কর্নার চুমু ও তাকবির ছাড়া শুধু স্পর্শ করবে। ওমরাহ ৭ চক্করের দোয়া পড়া।
যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তাহলে তাওয়াফ চালিয়ে যাবে; ভিড় করবে না। তাওয়াফের সময় কাবা শরিফ ও হাজরে আসওয়াদকে বাম দিকে রেখে রোকনে শামি ও রোকনে ইরাকি অতিক্রম করে রোকনে ইয়ামেনিতে আসবে. এ স্থানে তালবিয়া, তাকবির তাসবিহ ইত্যাদি পড়বে। যখনই হাজরে আসওয়াদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে, তখন হাজরে আসওয়াদ অভিমুখী হয়ে তাকবির বলবে. তাওয়াফের অন্য অংশে যা কিছু খুশি জিকির, দোয়া ও কোরআন তিলাওয়াত করবে। দুই রাকাত সালাত আদায় করার পর জমজমের পানি পান করবে।
তিন:- “সাফা-মারওয়ায় সাঈ করা”
জমজমের পানি পান করে ধীরে ধীরে সাফা পাহাড়ে আরোহণ করবে। সাফা ও মারওয়া পাহাড় দুটি কাবা শরিফের পাশেই অবস্থিত। এরপর মাসআ (সাঈ করার স্থান) আসবে।
যখন সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হবে তখন পড়বে—‘ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহ।’ এই আয়াত শুধু সাঈর শুরুতে সাফার নিকটবর্তী হলে পড়বে। সাফা-মারওয়াতে প্রতিবার আয়াতটি পড়বে না।
- এরপর বলবে— উচ্চারণ : নাবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহি।
- অর্থ : আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন আমরাও তা দিয়ে শুরু করছি।
অতঃপর সাফা পাহাড়ে উঠবে, যাতে কাবা শরিফ দেখতে পায়। কাবার দিকে ফিরে আলহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলবে। যখন সবুজ কালার চিহ্নিত স্থানে পৌঁছবে তখন যত জোরে সম্ভব দৌড়াবে। কিন্তু কাউকে কষ্ট দেবে না।
দ্বিতীয় সবুজ রং চিহ্নিত স্থান থেকে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবে। এভাবে মারওয়াতে পৌঁছবে।
সবুজ চিহ্নিত স্থানে এ দোয়া পড়বে—উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতাল আ-আজজুল আকরাম।’ সবুজ চিহ্নিত স্থান অতিক্রম করে নারী-পুরুষ সবাই স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবে। মারওয়ার ওপর উঠে কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দোয়া করবে। সাফা পাহাড়ের ওপর যা যা পড়েছে ও বলেছে এখানেও তা তা পড়বে ও বলবে। এরপর মারওয়া থেকে নেমে সাফার উদ্দেশে হেঁটে যাবে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটার স্থানে হেঁটে পার হবে; আর দৌড়ানোর স্থানে দৌড়ে পার হবে। সাফাতে পৌঁছার পর আগে যা যা করেছে তা তা করবে। মারওয়ার ওপরও আগের মতো তা তা করবে। এভাবে সাত চক্কর শেষ করবে। সাফা থেকে মারওয়া গেলে এক চক্কর। মারওয়া থেকে সাফাতে এলে এক চক্কর। সাঈর মধ্যে যা খুশি জিকির, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত করতে পারবে।
সাঈ শেষ হলে এ দোয়া পড়বে—উচ্চারণ : ‘রাব্বানা তাক্বাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাস ছামিউল আলিম।’
চার:- “মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা”
সাত চক্কর সাঈ শেষ করার পর পুরুষ হলে মাথা মুণ্ডন করবে অথবা মাথার চুল ছোট করবে। মুণ্ডন করলে মাথার সর্বাংশের চুল মুণ্ডন করতে হবে। অনুরূপভাবে চুল ছোট করলে মাথার সর্বাংশের চুল ছোট করতে হবে। মাথা মুণ্ডন করা চুল ছোট করার চেয়ে উত্তম। নারীরা আঙুলের এক কর পরিমাণ মাথার চুল কাটবে। এই আমলগুলোর মাধ্যমে ওমরাহ সমাপ্ত হবে। সুতরাং ওমরাহ মূলত ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, মাথা মুণ্ডন বা মাথার চুল ছোট করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।
জিলহজ্জ গ্রুপ বাংলাদেশ আপনার বিশ্বস্ত ট্রাভেল পার্টনার
আমাদের হজ ওমরাহ সাপোর্ট বাংলাদেশ গ্রুপে যুক্ত হয়ে আপনি নিয়মিত হজ ওমরাহ বিষয়ে আরো আপডেট পেতে এখনই গ্রুপে জয়েন হয়ে থাকতে পারেন।
যোগাযোগঃ
01711165606
01715595991
ঢাকা অফিসঃ
৫১/১ ভিআইপি টাওয়ার,লেভেল -৫,ভিআইপি রোড,নয়াপল্টন ,ঢাকা।
কেরানীগঞ্জ অফিসঃ
২৭১ নং জিলা পরিষদ মার্কেট পূর্ব আগানগর,দক্ষিন কেরানীগঞ্জ,ঢাকা।