Menu
হজ ওমরাহ সফর

হজ ওমরাহ সফর বিমানে কিভাবে ওযূ-ইসতিনজা ও সালাত করতে হয়

পবিত্র কোরআনে বিশেষভাবে নামাজ ও পবিত্র কোরআন পড়ার আগে অজু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে শারীরিক পবিত্রতা লাভের জন্য গোসলের পরে অজুর স্থান। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়িদায় বলা হয়েছে অজুর নিয়ম।

  • আপনার সফর দুপুরে হলে এয়ারপোর্ট জহুরের ওয়াক্তেই মাগরিব ও আসর এবং সূযাস্তের পর হলে মাগরিব ওয়াক্তেই মাগরিব ইশা আদায় করে নিতে পারেন ।
  • ওযু করে বিমানে আরোহন করলে যেকোন সালাত সেখানেও আদায় করতে পারেন দাড়িয়ে বা বিমানের সিটে বসে ।
  • উড়োজাহাজের (বিমানের) টয়লেটগুলো হাই কমোড হওয়ায় এত বসতে হয় চেয়ারের মতো করে ।
  • পানি স্বল্পতার কারনে সেখানে প্রসাব করার পর টিস্যু ব্যাবহার করতে পারেন । টিস্যু অবশ্যই নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন ।
  • তায়াম্মুমের জন্য অনেক বিমানে মাটি পাওয়া যায় না ।তাই আগে থেকেই ওযু করে বিমানে উঠবেন ।নতুবা একান্ত অপারগতায় অতি সামান্য পানি দিয়ে ওযু করে সালাত আদায় করবেন ।
  • সালাত আদায়ের জন্য বিমানের কেবিন ক্রথেকে কিবলার দিক নির্দেশনা জেনে নিতে পারেন ।
  • ঠান্ডা কাশি বা পানি ব্যাবহারে অসুবিধা হলে তায়াম্মুমের জন্য ছোট একটুকরা মাটি আপনার সাথে রাখতে পারেন ।
  • যেখানে সেখানে থুথু কাশি ফেলবেন না ।আপনার সিটের সামনে চেয়ারের পকেটে কাগজের ঠোঙ্গা আছে ।প্রয়োজনে এগুলো ব্যাবহার করতে পারেন ।

আল্লাহ বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াও তখন তোমাদের মুখ হাত কনুই পর্যন্ত ধোবে ও তোমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে নেবে, আর গিট পর্যন্ত ধোবে। যদি তোমরা অপবিত্র থাকো তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। যদি তোমরা অসুস্থ থাকো বা সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে। আসো কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে সংগত হও, আর পানি না পাও, তবে তাইয়াম্মুম করবে। পরিষ্কার মাটি দিয়ে এবং তা মুখে ও হাতে বুলিয়ে নেবে। আল্লাহ্ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না এবং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জানাতে পারো।’

(সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬, কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)

অজু করার নিয়ম হলো: বিসমিল্লাহর সঙ্গে প্রথমে নিয়ত করতে হয়। তারপর ডান হাতের ওপর তিনবার ও বাঁ হাতের ওপর তিনবার পানি ঢেলে ধুতে হবে। আঙুলের ফাঁকে এমনকি আংটির মাঝেও পানি প্রবেশ করাতে হবে। হাতের তালুতে পানি নিয়ে তিনবার গড়গড়ার সঙ্গে কুলি করতে হবে। তারপর ডান হাতে পানি দিয়ে নাকের ছিদ্রে পানি প্রবেশ করিয়ে বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে চেপে তিনবার নাক পরিষ্কার করে নিতে হবে। অতঃপর পুনরায় দুই হাতে পানি ছিটিয়ে তিনবার মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলতে হবে। পরে বাঁ হাতে পানি নিয়ে ডান বাহু কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে এবং একইভাবে ডান হাতে পানি নিয়ে বাঁ বাহু কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে। এরপর ভেজা হাত মাথার ওপরে নিয়ে সামনে থেকে পেছনে এবং পেছন থেকে সামনে মাসেহ বা মোছার কাজ করতে হবে।

এ সময় মনে মনে কলেমা শাহাদাত পড়া যেতে পারে। অতঃপর দুই কানে তর্জনী প্রবেশ করিয়ে এবং কানের পেছনে বৃদ্ধাঙ্গুলি নিয়ে ও তা আগেপিছে করিয়ে কানের ছিদ্র ও বাইরের অংশ মুছে পরিষ্কার করতে হবে। শেষে বাঁ হাতের তালু দিয়ে ডান পায়ের ওপর, নিচ ও আঙুলের ফাঁক ধুতে হবে এবং একইভাবে ডান হাতের তালু দিয়ে বাঁ পায়ের ওপর, নিচ ও আঙুলের ফাঁক ধুতে হবে। কোথাও অজুর পানি না পাওয়া গেলে বা অসুস্থতার কারণে কেউ পানি ব্যবহারে অসমর্থ হলে সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে শুকনো মাটি বা বালি ব্যবহার করে পরিচ্ছন্ন হওয়ার বিধান শরিয়তে দেওয়া হয়েছে।

 সূত্র: ‘অজু’, যার যা ধর্ম, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪

সময় হলেই উড়োজাহাজের উপর নামায আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু নামাযের নির্দিষ্ট সময় বা দু’নামায একত্রিত করার সময় শেষ হওয়ার আগেই যদি বিমান অবতরণ করার সম্ভাবনা থাকে, আর যমীনে থাকাবস্থায় যেভাবে নামায আদায় করতে হয়, সেভাবে যদি বিমানের উপর সম্ভব না হয়, তবে সেখানে ফরয নামায আদায় করবে না। বরং অবতরণ করার পর যমীনে নামায আদায় করবে। যেমনঃ জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে সূর্যাস্তের পূর্বে বিমান উড্ডয়ন করল। এখন আকাশে থাকাবস্থায় মাগরিব নামায আদায় করবে না। পরবর্তী এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণ করার পর নামায পড়বে। কিন্তু যদি দেখে যে, মাগরিব নামাযের সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে, তবে এশা নামাযের সাথে মাগরিবকে একত্রিত করার নিয়ত করে নিবে। অতঃপর অবতরণ করে মাগরিব নামাযকে পিছিয়ে দিয়ে এশার সাথে একত্রিত আদায় করবে। কিন্তু যদি বিমান চলতেই থাকে- অবতরণের সম্ভাবনা না থাকে এবং এশা নামাযেরও সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা হয়, তখন বিমানের উপরেই সময় অতিক্রম হওয়ার আগেই মাগরিব ও এশা নামায একত্রিত আদায় করে নিবে।

বিমানে ফরয নামায পড়ার পদ্ধতি হচ্ছে, ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর দিবে। ছানা, সূরা ফাতিহা ও অন্য কোন সূরা বা আয়াত পাঠ করে রুকূ করবে। রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে সিজদা করবে। নিয়ম মাফিক সিজদা করতে সক্ষম না হলে বসে পড়বে এবং বসাবস্থায় ইঙ্গিতের মাধ্যমে সিজদা করবে। নামায শেষ করা পর্যন্ত এরূপই করবে। আর পূর্ণ সময় ক্বিবলামুখী হয়েই থাকবে।

আর নফল নামাযের পদ্ধতি হচ্ছে, বিমানের সিটে বসে বসেই নামায আদায় করবে। ইশারার মাধ্যমে রুকূ-সিজদা করবে। সিজদার জন্য রুকূর চেয়ে একটু বেশী মাথা ঝুকাবে।

কোন কোন বিদ্বানের মতে ৮৩ (তিরাশী) কিলোমিটার পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করলে নামায কসর করবে। কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, সমাজে প্রচলিত রীতিনীতিতে বা দেশীয় প্রথায় যাকে সফর বলা হয় তাতেই নামায কসর করবে। যদিও তা ৮০ কিলোমিটার না হয়। আর মানুষ যদি তাকে সফর না বলে, তবে তা সফর নয়; যদিও তা ১০০ কিঃ মিঃ হয়। এটাই শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ)এর মত। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা নির্দিষ্টভাবে সফরের কোন দুরত্ব নির্ধারণ করেননি।

প্রচলিত রীতিনীতিতে মতভেদ দেখা দিলে ইমামদের যে কোন একটি মত গ্রহণ করলেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা ইমামগণ সবাই মুজতাহিদ বা গবেষক। এক্ষেত্রে কোন দোষ হবে না ইনশাআল্লাহ্‌। কিন্তু বর্তমানে মানুষের প্রচলিত রীতিনীতি যেহেতু সুনির্দিষ্ট তাই ইহা গ্রহণ করাই অধিক সঠিক।

জবাবে বলব, একত্রিত করণের বিষয়টি শুধু কসরের সাথে নির্দিষ্ট নয়; বরং তা প্রয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট। অতএব সফর বা গৃহে অবস্থান যে কোন সময় যদি মানুষ একত্রিত করণের প্রয়োজন অনুভব করে, একত্রিত করবে। অতএব বৃষ্টির কারণে যদি মসজিদে যেতে কষ্ট হয়, তবে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। শীতকালে যদি কঠিন ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হয় এবং সে কারণে মসজিদে যাওয়া কষ্টকর হয় তবে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। নিজের মূল্যবান সম্পদের ক্ষতি বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তবে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। এছাড়া এ ধরণের আরো কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখিন হলে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। ছহীহ্‌ মুসলিমে আবদুল্লাহ্‌ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

جَمَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِالْمَدِينَةِ فِي غَيْرِ خَوْفٍ وَلَا مَطَرٍ

“নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় বৃষ্টি বা ভয়-ভীতির কারণ ছাড়াই যোহর ও আছর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা নামাযকে একত্রে আদায় করেছেন।” ইবনু আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল, কেন তিনি এরূপ করেছেন? তিনি বললেন, তিনি উম্মতকে সংকটে ফেলতে চাননি।

অর্থাৎ এধরণের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে দু’নামাযকে একত্রিত না করলে যে সংকট হওয়ার কথা তিনি তা চাননি।

এটাই হচ্ছে মূলনীতি। মানুষ যখনই দু’নামাযকে একত্রিত না করলে সমস্যা বা সংকটের সম্মুখিন হবে তখনই একত্রিত করণ তার জন্য বৈধ হয়ে যাবে। আর সমস্যা না হলে একত্রিত করবে না। কিন্তু যেহেতু সফর মানেই সমস্যা ও সংকট তাই মুসাফিরের জন্য দু’নামাযকে একত্রিত করা জায়েয। চাই তার সফর চলমান হোক বা কোন স্থানে অবস্থান করুক। তবে সফর চলমান থাকলে একত্রিত করা উত্তম। আর সফরে গিয়ে কোন গৃহে বা হোটেলে অবস্থান করলে একত্রিত না করাই উত্তম।

কিন্তু মুসাফির যদি এমন শহরে অবস্থান করে যেখানে নামায জামাআতের সাথে অনুষ্ঠিত হয়, তখন জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব। ঐ সময় নামায কসরও করবে না একত্রিতও করবে না। কিন্তু জামাআত ছুটে গেলে কসর করবে একত্রিত করবে না। অবশ্য একত্রিত করা জরূরী হয়ে পড়লে করতে পারে।

salamsony

Alhamdulliha
View All Articles
Contact Us On WhatsApp