একসময় ইউরোপের কথা শুনলেই প্রথমে ইতালির কথা মনে ভেসে আসতো। কেননা ইংল্যান্ডের পরে ইউরোপের কোনো দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি আছে দেশটিতে। নিরাপদ ও সহজ অভিবাসন এবং সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে ইতালির বিভিন্ন শহর।
আমার ঘুরে বেড়ানোর চরম নেশা সেই ছোটবেলা থেকেই। তাই ইউরোপে বিগত চার বছরে প্রায় ১৫টি দেশের পঞ্চাশের বেশি শহর ভ্রমণ করার সৌভাগ্য হয়েছে। বিভিন্ন দেশে একাধিকবার ভিন্ন ভিন্ন শহরে আমার যাওয়া হয়েছে। ইতালিও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবছরের শুরুতে বিশ্বের প্রাচীনতম নগরী ইতালির রাজধানী রোম শহর ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল। আর বছরের শেষে অন্য দুই শহর বাণিজ্যিক নগরী মিলান এবং পর্যটন নগরী ভেনিস ভ্রমণের মাধ্যমে ষোলোকলা পূর্ণ হলো।
ভেনিসের গঠন মূলত শহরটিকে আলাদা করে তুলেছে। যা শহরটিকে বিশ্বের সেরা সুন্দর শহরের তকমা দিয়েছে। একশ’ সতেরোটি দীপপুঞ্জ নিয়ে এক হাজার পাঁচশ বছর আগে গড়ে ওঠা শহরটিতে একশ’ পঞ্চাশটির বেশি খাল রয়েছে। যার ওপর প্রায় চারশটি ব্রিজ রয়েছে মানুষ চলাচলের জন্য। এসব কারণে শহরটি অন্য যেকোনো শহরের তুলনায় আকর্ষণীয়। যদিও এই অপূর্ব সুন্দর শহরটি প্রতি একশ’ বছরে ৮ ইঞ্চি করে পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আগে ভ্রমণার্থীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠেছে।

মানুষ সেই অরণ্যে থেকে হিমালয়, মরুভূমি থেকে উত্তর মেরু-সব জায়গায় নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সাগরতীরে ভাসমান একটি শহরে হাজার বছর ধরে মানুষের বসবাস সত্যি অসাধ্য সাধন বটে। আর তাই তো এমন দৃশ্য দেখতে প্রতি বছর ভিড় জমায় লক্ষ-কোটি পর্যটক। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকষর্ণীয় এবং বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃত এই শহরটি কোটি মানুষের পদচারণায় অন্যতম ব্যয়বহুল শহরের তকমা পেয়েছে ইতোমধ্যে।

এখানে পর্যটকদের জন্য ঘুরে বেড়ানোর বেশ কিছু স্থান রয়েছে। তার মধ্যে বেসিলিকা ডি সান মার্কো, ডোজের প্যালেস, ডরসডুরো, গন্ডোলা রাইড, রিয়াল্টো মার্কেট, জাদুঘর ও গির্জা ট্রেলিং, লা ফেনিস থিয়েটার, মুরানো, বুরানো, তুরসেলো দ্বীপপুঞ্জ এবং লিডো সী বিচ। মোটামুটি তিন দিনের ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে সব স্থান পরিদর্শনের জন্য যথেষ্ট হবে। কিন্তু আমাদের মাত্র একদিনের স্বল্প সময়ের ট্যুর!

আমরা শহটির গভীরে গিয়ে অবলোকন করার লক্ষ্যে সারাদিনের জন্য ২০ ইউরো করে জনপ্রতি একেকটি বোটের টিকিট সংগ্রহ করলাম। এ টিকিটের মাধ্যমে সারাদিন যতবার খুশি সব ধরনের যানবাহনে ভ্রমণ করা যাবে। আমরা সেন্টার স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করলাম। গ্রান্ড ক্যানেল দিয়ে আমাদের বোট সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

মূল খাল থেকে অসংখ্য ছোট-বড় খাল বিভিন্ন দিকে বয়ে চলেছে। বোট থেকে দু’দিকে তাকালে দালানগুলোকে মনে হবে পানির উপর ভেসে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতি এবং আধুনিকতার এক চমৎকার মেলবন্ধনে তৈরি হয়েছে শহরটি।

মিলান থেকে ট্রেনে চড়ার আগে আমাদের একজন সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান দিলো আমরা ভেনিস আসছি। অনেকেই আমাদের কল এবং মেসেজ পাঠিয়েছে এক কাপ কফি খাওয়ার জন্য। ভেনিসে প্রচুরসংখ্যক বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছে। যাদের বেশিরভাগ কাজ করছে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে এবং ট্যুরিজম সংশ্লিষ্ট খাতে। দেশীয় ভাইদের অতিথিপরায়ণতা দেখে খুবই মুগ্ধ হলাম। কিন্তু সময়ের অভাবে অনেকের সাথে দেখা করা সম্ভব হয়নি।
সিনিয়র এক ভাই যিনি একসময়ে পর্তুগাল ছিলেন। বর্তমানে ভেনিসে ব্যবসা করছেন। তার অনুরোধে আমরা তৃতীয় স্টেশন নেমে তার আতিথেয়তা গ্রহণ করলাম। আমি সাধারণত কোথাও ভ্রমণে গেলে সেখানকার স্থানীয় খাবার খেতে পছন্দ করি। আর ইতালিয়ান ফিজা বিশ্বের সেরা। অসংখ্য স্বাদের ফিজা পাওয়া যায় এখানে, যা ভীষণ সুস্বাদু। তাই আমরা সবাই পছন্দসই ফিজা এবং কফি খেলাম সেই ভাইয়ের সাথে দেখা করে।
জলে ভাসমান আশ্চর্য শহর “ভেনিস”
:-

পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় ইতালির ভেনিস শহরটি অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে ভাসমান ১১৭ টি দ্বীপ নিয়ে তৈরি হয়েছে। বিখ্যাত গ্র্যান্ড ক্যানালকে ঘিরে পুরো ভেনিসে দেড়শোটি খাল আর চারশোটি ব্রিজ রয়েছে । ইতালি ঘুরতে গেলে এই শহরটি অবশ্যই ঘুরে দেখবেন।
* কিভাবে যাবেন? 

ইতালির যে কোনো বড়ো শহর যেমন রোম, মিলান বা ফ্লোরেন্স থেকে হাই স্পিড বুলেট ট্রেনে চড়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় Venice Mestre রেলওয়ে স্টেশনে। আমরা ২৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফ্লোরেন্স থেকে গেছিলাম, সময় লেগেছিল দুঘন্টা।

Venice Mestre কিন্তু স্থলভাগের অবস্থিত। ক্যানাল দেখতে আপনার পৌঁছতে হবে Santa Lucia তে। ট্রেনে সময় লাগে দশ মিনিট। ট্রেনের টিকিট Trenitalia ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে কাটতে পারেন।
* কোথায় থাকবেন? 
পৃথিবীর বাকি টুরিস্ট স্পটের মতো ভেনিসেও বিভিন্ন রেঞ্জের হোটেল বা Airbnb পেয়ে যাবেন। আমরা ছিলাম Hotel Aaron এ (venice mestre থেকে মিনিট পাঁচেকের হাঁটাপথ)। আমরা অনেক আগে গেছিলাম। এখন দিনপ্রতি ঘরভাড়া প্রায় ৬০০০ টাকা। বুকিং ডট কম থেকে বুক করতে পারেন। যাওয়ার পথে সুপারমার্কেট পড়বে যেখান থেকে আমরা চাইনিজ নুডলস, ফল ইত্যাদি কিনেছিলাম ।

* কি কি দেখবেন?
ভেনিসের বিখ্যাত কিছু দেখার জায়গা হলো:-
✓ Saint Marco Squre
✓ Saint Marco Tower
✓ St. Mark’s Basilica
✓ মুরানো আইল্যান্ড
✓ মুরানো গ্লাস ফ্যাক্টরি
✓ বুরানো আইল্যান্ড
✓ রঙিন বাড়িঘর, অলিগলি, অসংখ্য ব্রিজ আর খাল (পায়ে হেঁটে দেখবেন)
✓ গন্ডোলা করে গ্র্যান্ড ক্যানাল পরিদর্শন
✓ ভেনিস ম্যাল
* কিভাবে ঘুরবেন?
সস্তায় ভেনিস ঘোরার সবথেকে ভালো উপায় হলো ২৪ ঘণ্টার hoho বোট টুর করা। জনপ্রতি খরচ প্রায় €২৫ বা ২৩০০ টাকা। আপনারা চাইলে ৪৮ ঘণ্টার টিকিটও কাটতে পারেন।

অনলাইনেই এই টিকিট বুক করা যায়। Get your guide এর মতো অ্যাপ থেকেও বুক করতে পারেন।
Santa Lucia রেলওয়ে স্টেশনের কাছে hoho বাস স্টপে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে ওরাই সাহায্য করে দেবে। KFC এর পাশ থেকে hoho বোট ছাড়ে। ওরা ম্যাপও দিয়ে দেবে (আপনারা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোডও করে নিতে পারেন)।
বোটের স্টপেজগুলো যেমন San Marco, Murano Island ইত্যাদি জায়গা যাওয়ার টাইমিংও ম্যাপেই পেয়ে যাবেন। এছাড়াও মুরানো, বুরানো আইল্যান্ড প্রাইভেট বোট টুরও করতে পারেন।
পাঁচ ঘণ্টার জন্য জনপ্রতি খরচ প্রায় ২০০০-৬০০০ টাকা। আর গ্র্যান্ড ক্যানালে আধ ঘণ্টার প্রাইভেট গন্ডোলা রাইড করতে পাঁচজনের গ্রুপের খরচ প্রায় ১৩-১৪ হাজার টাকা।
আমরা hoho বোটে করে ঘুরেছিলাম।
জিলহজ্জ গ্রুপ বাংলাদেশ
আমরা বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত বৈধ হজ লাইসেন্স এবং আইটিএ অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ।আপনার বিশ্বস্ত ট্রাভেল এজেন্ট
যোগাযোগঃ ইমু ও হোয়াটসএপ 📲01711165606 ,📲01715595991
▶ ঢাকা অফিসঃ ৫১/১ ভিআইপি টাওয়ার,লেভেল -৫,ভিআইপি রোড,নয়াপল্টন ,ঢাকা।
▶কেরানীগঞ্জ অফিসঃ ২৭১ নং জিলা পরিষদ মার্কেট পূর্ব আগানগর,দক্ষিন কেরানীগঞ্জ,ঢাকা।
আমাদের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক টেলিগ্রাম চ্যানেলে আপনি এড হয়ে নিয়মিত এই রকম আরো মাসলা মাসায়েল জানতে
আমাদের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক হোয়াটসএপ গ্রুপে আপনি এড হয়ে নিয়মিত এই রকম আরো মাসলা মাসায়েল জানতে
সর্বশেষ আপডেটের জন্য, আপনি আমাদের ✅WhatsApp গ্রুপ বা ☑️ টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিতে পারেন।